ডলার সংকটে অর্থনীতির সব খাতেই ক্ষত

দেশে ডলার সংকট দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় অর্থনীতির সব খাতেই বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। দৃশ্যমান সমস্যাগুলোর বাইরে অদৃশ্যমান ক্ষতও সৃষ্টি হয়েছে। যা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। বর্তমানে বেশকিছু ক্ষত দৃশ্যমান হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও অসহনীয় লোডশেডিং। এছাড়াও আছে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও টাকার মান কমে যাওয়া। এতে বেড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক দায়দেনা ও আমদানি খরচ। আমদানি পণ্যের দাম বাড়ায় অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটে শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং বেড়েছে শিল্প ও কৃষি উৎপাদন ব্যয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কম হওয়ায় কর্মসংস্থানের গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ডলার সংকট মোকাবিলায় চড়া সুদে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারের খরচ বাড়ায় ও রাজস্ব আয় কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণ নিতে হচ্ছে বেশি। এতে সুদ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। অর্থনীতির এসব ক্ষত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের মানুষকে আঘাত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, অদৃশ্যমান ক্ষতের মধ্যে রয়েছে, সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার যে ভিত্তিগুলো রয়েছে তা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে অর্থনীতি সামান্য একটু ধাক্কাতেই অস্থির হয়ে পড়ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারের রেকর্ড স্পর্শ করেছিল। ওই সময়ে প্রতিমাসের আমদানি ব্যয় হতো ৫০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এ হিসাবে ৯ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ ছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ওই ধাক্কা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারেনি। এপ্রিলেই ডলার সংকট দেখা দেয়। মে মাসে তা প্রকট হয়। এরপর সংকট বাড়তেই থাকে। এতে ডলারের দাম বাড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই সময়ে আগাম সতর্কতা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিয়েছিল। যে কারণে এখন পর্র্যন্ত সংকট বড় আকার ধারণ করেনি।

দৃশ্যমান যে দুটি প্রধান সমস্যা মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের সংকট-সেটিও ডলার সংকটের কারণে। এছাড়া ডলার না থাকায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে যে দুটি প্রধান সংকটের কথা বলা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি ও বিদ্যুতের ঘাটতি। এ দুটিও ডলার সংকটের কারণে সৃষ্ট। ডলার কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি করা যাচ্ছে না। যে কারণে লোডশেডিং অসহনীয় রূপ ধারণ করেছে। এর প্রভাবে জনজীবনে সীমাহীন ভোগান্তিসহ শিল্প ও কৃষি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি পণ্য আমদানি করায় ও ডলারের দাম বাড়ায় দেশের ভেতরেও পণ্যের দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অনেকের মতে, এ হার আরও বেশি। টানা ৩ মাস ধরে এ হার ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। ভারত, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয় এ হার ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।